একটি মাত্র সেতু বদলে দিতে পারে ৫০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯ জুলাই, ২০২৫, ০২:৩৮ দুপুর

অপূর্ব লাল সরকার, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকে : বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা গ্রামের সন্ধ্যা নদীতে সেতু না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পরেছে আশপাশ এলাকার ৫০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। বিকল্প না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে খেয়ার মাধ্যমে নদী পার হচ্ছে স্থানীয়রা। বেশিরভাগ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিশু ও বয়স্কদের। খেয়ার মাধ্যমে নদী পার হতে গিয়ে অহরহ ঘটছে ছোটবড় নানান ধরণের দুর্ঘটনা।

দীর্ঘদিন ধরে একটি ব্রিজের দাবি জানিয়ে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি দফতরের অফিসে ধর্ণা দিয়েও কোনো সুফল পাননি ভুক্তভোগীরা। প্রয়োজনের তাগিদে শত বছরের খেয়াঘাট দিয়ে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও আজও সুনজরে পরেনি এলজিইডি কর্তৃপক্ষ বা সেতু বিভাগের।
বিকল্প সেতু না থাকায় পয়সারহাট, বাগধা ও আমবৌলা এই তিন গ্রামের মানুষকে ১০ কিলোমিটার বেশি ঘুরে গোপালগঞ্জ-খুলনা মহাসড়কের পয়সারহাট সেতু দিয়ে পারাপার হতে হয়।

এছাড়া নদীর পশ্চিমপাড়ে একাধিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ স্থানীয় হাটবাজার থাকায় নদীর পূর্বপাড়ের শিক্ষার্থী ও লোকজনের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হলো খেয়ানৌকার মাধ্যমে নদী পার হওয়া। খেয়ার মাধ্যমে নদী পার হতে তাদের সময় লাগে ১০-১৫ মিনিট। অন্যদিকে পয়সারহাটে অবস্থিত সেতু ঘুরে যাতায়াতে তাদের সময় লাগে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট। একারণেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খেয়ার মাধ্যমেই নদী পার হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়রা।

এ পরিস্থিতিতে এখানে একটি সেতু নির্মাণের জোর দাবি তুলেছে ভুক্তভোগী স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদীর পূর্বপাড় থেকে অন্তত: ২৫ জন যাত্রী ওপারে যাওয়ার জন্য খেয়ায় চেপেছে। এর মধ্যে শিশুসহ ১০ জন ছাত্রীও রয়েছে। এভাবেই প্রতিনিয়ত নদী পার হয়ে আসছে এই গ্রামের লোকজন।

এলাকাবাসী জানান, সেতুর অভাবে এই অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। নদীর এপাড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসা। অপর পাড়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউপি কার্যালয়। তাই ওপাড়ের অন্তত: ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে নদী পাড় হয়ে পশ্চিমপাড়ে আসতে হয়। অন্যদিকে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউপি কার্যালয় ওপাড়ে অর্থাৎ নদীর পূর্বপাড়ে হওয়ায় গ্রামবাসীদের প্রতিদিনই ওপাড়ে যেতে হয়। পয়সারহাটে অবস্থিত সেতু ঘুরে যাতায়াতে অনেক সময় লাগে। এজন্য আমরা এই খেয়ার মাধ্যমেই নদী পার হয়ে থাকি। নদীতে ভাটির সময় খেয়ানৌকা কিনারায় না আসাসহ ঝড়বৃষ্টির সময় নৌকায় উঠতে ও নামতে আমাদের অনেক সমস্যা হয়। এত সমস্যা থাকা সত্বেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই খেয়ার মাধ্যমে আমাদের নদী পার হতে হয়।

স্থানীয় শিক্ষক মজিবর রহমান বলেন, ব্যবসায়ীদের পেশার কারণেই তাদের প্রতিদিন এপাড় থেকে ওপাড়ে যেতে হয়। একেকবার খেয়া পার হতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় লেগে যায়। তাই এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে এই গ্রামের স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ হাজারো লোকজন খুব উপকৃত হবে। তাই আমরা এখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি সেতু নির্মাণের। সেতুটি নির্মিত হলে শিক্ষার পাশাপাশি অর্থনেতিক উন্নয়ন ও লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ কমবে বলে জানান স্থানীয়রা।

এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী রবীন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, বাগধা খেয়াঘাটে একটি সেতু নির্মাণের এখনো কোনো পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। গত বছর নদীর দুই পাশে ঘাটলা স্থাপনা করা হয়েছে এবং পরবর্তীতে টেন্ডার হলে ব্রিজের কাজ করা হবে।

 

Link copied!