রাজধানীর উত্তরা এলাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিজের জীবন বাজি রেখে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে বাঁচিয়েছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী সমন্বয়কারী (Co-ordinator) শিক্ষক মাহরিন চৌধুরী (৪২)। তবে শেষ পর্যন্ত নিজেকে আর রক্ষা করতে পারলেন না তিনি- চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সোমবার (২১ জুলাই) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল বলে নিশ্চিত করেছেন চিকিৎসকরা।
মাহরিন চৌধুরীর ছোট ভাই মুনাফ মুজিব চৌধুরী তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে বোনের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখেন, “মাহরিন আপু আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি ছিলেন আমার বড় বোন, যিনি আমাকে মায়ের মতো করে আগলে রেখেছেন সবসময়।”
পারিবারিক সূত্র জানায়, সোমবার দুপুরে স্কুল ছুটি শেষে যখন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বের হচ্ছিলেন, তখনই বিমানটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। ওই সময় মাহরিন চৌধুরী ছিলেন স্কুল ভবনের ভেতরে। ধোঁয়া ও আগুন ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এই পরিস্থিতিতেই নিজের প্রাণের তোয়াক্কা না করে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে শুরু করেন মাহরিন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তিনি অন্তত ২০ জন শিশু শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচিয়েছেন।
তার স্বামী মনসুর হেলাল বলেন, “ওর শরীরের প্রতিটি অংশ পুড়ে গিয়েছিল। আমার মনে হয় ও প্রায় ১০০ শতাংশ দগ্ধ ছিল। তবুও লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে আমাকে বলেছিল—ছুটি শেষে বের হচ্ছিল, তখনই বিমানটি পড়ে। নিজে আগুনে দগ্ধ হয়েও বাচ্চাদের বাঁচাতে চেষ্টা করেছে।”
উদ্ধারকর্মীরাও মাহরিনের এই আত্মত্যাগের প্রশংসা করে বলেন, “আগুন ও ধোঁয়ার মধ্যে যেভাবে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন, তা সত্যিই সাহসিকতা ও মানবতার বিরল দৃষ্টান্ত।”
শিক্ষক মাহরিন চৌধুরীর মৃত্যুতে পুরো শিক্ষা অঙ্গন ও জাতি শোকাহত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে ‘আসল বীর’ আখ্যা দিয়ে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছেন হাজারো মানুষ।
শিক্ষক মাহরিন চৌধুরীর আত্মত্যাগের এই গল্প শুধু একটি মৃত্যুর সংবাদ নয়—এটি এক নারীর অসামান্য সাহস, দায়িত্ববোধ এবং ভালোবাসার জ্বলন্ত উদাহরণ। জাতির পক্ষ থেকে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।
আপনার মতামত লিখুন :