ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫

শ্রমিকের ন্যায্যতা, সুরক্ষা ও মর্যাদা শ্রমিকের অধিকার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:১৭ রাত

আজ ৭ অক্টোবর বিশ্ব শোভন কর্মদিবস-২০২৫, মঙ্গলবার, বিকাল ০৩:০০ ঘটিকায়, টেকনিক্যাল মিরপুর রোড, ঢাকায় ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার ও গ্রীণ বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের যৌথ উদ্যোগে বিশ^ শোভন কর্মদিবস উপলক্ষ্যে শ্রমিকের ন্যায্যতা, সুরক্ষা ও মর্যাদা শ্রমিকের অধিকারশীর্ষক মানববন্ধন ও র‌্যালী অনুষ্ঠিত।

মানববন্ধনে ন্যাশনাল ওয়ার্কার্স ইউনিটি সেন্টার ও গ্রীণ বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতানা বেগম এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস, সহ-সভাপতি সেলিনা হোসাইন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  রোজিনা আক্তার সুমি, মিরপুর আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাহেরুল ইসলাম, ন্যাশনাল ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স সেন্টারের সভাপতি খাদিজা বেগম, গাজীপুর জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রাকিব খান, আহমেদ ফ্যাশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেন মোল্লা, সহ-সভাপতি রিনা বেগম প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্য সুলতানা বেগম বলেন-বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের জন্য একটি নিরাপদ, সম্মানজনক এবং ন্যায্য কর্মপরিবেশ নিশ্চত করতে ২০০৮ সাল থেকে আইএলও এই দিবসটি পালনের উদ্যোগ গ্রহন করে। এ বছরের বিশ্ব শোভন কর্ম দিবসের প্রতিপাদ্য ‘গণতন্ত্রই শোভন কাজের ব্যবস্থা করবে’। সামাজিক ন্যায়বিচার, শ্রমিকের মর্যাদা ও ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের ন্যায্যতা-সুরক্ষা ও মর্যাদা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে আইএলও কনভেনশন ১৫৫, ১৮৭ ও ১৯০ অনুসমর্থনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত এসডিজির লক্ষ্যমাত্রার ১৭ টি লক্ষ্যের মধ্যে ৮ নম্বর লক্ষ্যে স্পষ্টভাবে ‘সবার জন্য শোভনকাজ’ নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করা হয়। এ থেকে সহজেই অনুমেয় টেকসই উন্নয়নের জন্য শোভন কাজ কতটা গুরুত্বপূর্ন। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এর মতে শোভন কাজের চারটি প্রধান পিলার রয়েছে: ১. কর্মসংস্থান সৃষ্টি: সবার জন্য সমান সুযোগ এবং ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করে পূর্নকালীন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ২. সামাজিক সুরক্ষা: শ্রমিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে কেউ কাজ করতে অক্ষম হলে বা অন্য কোন সমস্যায় পড়লে তারা সুরক্ষা পায়। ৩. সামাজিক সংলাপ: শ্রমিক, নিয়োগকর্তা এবং সরকারের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও সহযোগিতার মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নয়ন করা। ৪. অধিকার রক্ষা : কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য সুযোগ তৈরি করা।

বক্তাগন বলেন-শোভন কর্মপরিবেশ তৈরিতে প্রধান বাধাসমূহ : ১. অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বিস্তৃতি: বাংলাদেশের শ্রম শক্তির একটি বিশাল অংশ (৮৬.২%) অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে, যেখানে শ্রমিকরা প্রায়ই শোভন কর্মপরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয়। ২. শ্রমিকদের প্রতি অসৎ শ্রম আচরন: অনেক ক্ষেত্রে মালিক বা নিয়োগকর্তাদের মধ্যে শ্রমিকদের প্রতি অসৎ আচরন দেখা যায়, যা শোভন কর্মপরিবেশ তৈরির পথে একটি বড় বাধা। ৩.ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে বাধা: শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে ট্রেড ইউনিয়ন একটি গুরত্বপূর্ন মাধ্যম হলেও, এন্টি ট্রেড ইউনিয়ন মনোভাবের কারনে এটি সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারে না। ৪. প্রতিকূল ও অস্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ: অনেক কর্মক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশ বিদ্যমান, যেখানে একটাকা কাজ করার ফলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয় এবং তারা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়। ৫. আইনের সঠিক প্রয়োগের অভাব: শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় প্রনীত আইন ও বিধিমালা মাঠ পর্যায়ে সঠিকভাবে প্রয়োগ না হওয়া একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা। শোভন কর্মপরিবেশ নির্মাণে আমাদের দাবিসমূহ: ন্যায্য মজুরি ও আর্থিক নিরাপত্তা: শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত ও ন্যায্য  বেতন নিশ্চিত করা , যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে। সঠিক কর্মঘন্টা: সুনির্দিষ্ট এবং যুক্তি সংঙ্গত কর্মঘন্টা নির্ধারণ করা এবং অতিরিক্ত সময় কাজ করার জন্য উপযুক্ত ভাতা প্রদান করা। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য: কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা। শিশু শ্রম বন্ধ: কর্মক্ষেত্রে কোন ধরনের শিশুশ্রম প্রতিরোধ ও নির্মূল করা। হয়রানি ও বৈষম্য দূরীকরন: কর্মক্ষেত্রে কোন ধরনের হয়রানি, নির্যাতন বা লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য বন্ধ করা। শ্রমিক সংগঠন করার অধিকার: শ্রমিকদের স্বাধীনভাবে শ্রমিক সংগঠন  তৈরি ও তাতে অংশগ্রহনের অধিকার নিশ্চিত করা।

Link copied!