হাসিনা-জুলাইয়ের ৩৬ দিন- শিরোনামে আল জাজিরার চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধান

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই, ২০২৫, ০৪:২৮ দুপুর

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা তাদের অনুসন্ধানী ইউনিটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 

“হাসিনা—জুলাইয়ের ৩৬ দিন” শিরোনামের প্রামাণ্যচিত্রে দাবি করা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে শেখ হাসিনা প্রাণঘাতী বলপ্রয়োগের নির্দেশ দেন, যার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে ঘটে যায় ভয়াবহ সহিংসতা।

আল জাজিরার দাবি, তাদের হাতে থাকা গোপনে রেকর্ডকৃত ফোনালাপে শোনা যায় শেখ হাসিনা ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে বলছেন, "আমার নির্দেশনা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। আমি খোলা আদেশ দিয়েছি। এখন তারা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করবে, যেখানেই পাবে গুলি চালাবে।"

আরেকটি ফোনালাপে দাবি করা হয়, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছুড়ে আন্দোলন দমন করা হয়েছিল।

প্রামাণ্যচিত্রে একাধিক চিকিৎসকের স্বাক্ষ্য তুলে ধরা হয়েছে, যারা জানিয়েছেন, হেলিকপ্টার গুলিতে বহু বিক্ষোভকারী নিহত ও আহত হন। আল জাজিরার তথ্যমতে, ওই আন্দোলনের তিন সপ্তাহে অন্তত ১ হাজার ৫০০ জন নিহত, ২৫ হাজারের বেশি আহত এবং প্রায় ৩০ লাখ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়েছিল।

প্রতিবেদনে আরও প্রকাশ পেয়েছে, ছাত্র আবু সাইয়েদের হত্যাকাণ্ডকে চাপা দিতে সরকারের ভয়ভীতি ও ঘুষ প্রয়োগের চিত্র।

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পাঁচবার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট বদলানোর চেষ্টা করেন, যাতে গুলির অস্ত্রের কথা লুকানো যায়।

নিহত সাইয়েদের পরিবারকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করাতে বাধ্য করা হয়, যা ছিল একপ্রকার প্রচারণামূলক রাজনৈতিক চাপ।

প্রকাশিত গোপন নথিতে দেখা যায়, সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও বিশ্ববাসীর কাছে সহিংসতার সত্য চিত্র পৌঁছাতে বাধা সৃষ্টি করেছিল।

তবে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা কখনোই প্রাণঘাতী অস্ত্রের নির্দেশ দেননি এবং ১৮ জুলাইয়ের ফোনালাপের সত্যতা তারা অস্বীকার করে।

আবু সাইয়েদের পরিবার যদি কোনো ভীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে থাকে, তার জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করে।

তারা আরও দাবি করে, আন্দোলনকারীদের সংঘাত ও সহিংসতার কারণে ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে হয়েছে।

এই চাঞ্চল্যকর অনুসন্ধান বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রতিবেদন দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর অধ্যায়ের প্রমাণপত্র হয়ে থাকবে। এখন অপেক্ষা—আন্তর্জাতিক তদন্ত হবে কিনা এবং এর ভিত্তিতে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় কিনা।

Link copied!