স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হলে অস্ত্র ত্যাগ করবে না যোদ্ধারা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২ আগস্ট, ২০২৫, ০৯:৫৫ রাত

ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস জানিয়েছে, একটি ‘স্বাধীন ও পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তারা নিজেদের অস্ত্র পরিত্যাগ করবে না। শনিবার এক বিবৃতিতে হামাস এ কথা জানিয়েছে। এর আগে ইসরায়েলি পত্রিকা হারেতজ এক প্রতিবেদনে দাবি করে, মার্কিন মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফের একটি কথোপকথনের অডিওতে তাকে বলতে শোনা গেছে- ‘হামাস নাকি নিরস্ত্রীকরণের বিষয়ে রাজি হয়েছে এবং আমরা যুদ্ধের সমাপ্তির খুব কাছাকাছি আছি।

এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে হামাস টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে জানায়, কিছু সংবাদমাধ্যমে মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে যে হামাস অস্ত্র ত্যাগে রাজি হয়েছে—এ ধরনের দাবির জবাবে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, যতদিন দখলদারিত্ব চলবে, ততদিন প্রতিরোধ এবং অস্ত্র আমাদের একটি বৈধ জাতীয় অধিকার, যা আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি দ্বারা স্বীকৃত।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই অধিকার থেকে আমরা কেবল তখনই সরে আসব, যখন আমাদের সব জাতীয় অধিকার, বিশেষ করে পূর্ণ স্বাধীনতা ও জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে। স্টিভ উইটকফ শনিবার তেল আবিবে ইসরায়েলি জিম্মিদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় শত শত মানুষ একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির দাবিতে সমবেত হয়, যাতে গাজা উপত্যকায় আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা যায়।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটি উইটকফের তৃতীয় সফর। তার সফরের আগেই হামাস ও ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলি দুই জিম্মি এভিয়াতার ডেভিড ও রম ব্রাসলাভস্কির দুর্বল ও কঙ্কালসার ভিডিও প্রকাশ করে, যা নতুন করে ক্ষোভ উসকে দেয়।

এর আগের দিন শুক্রবার উইটকফ গাজার দক্ষিণাঞ্চলে বিতর্কিত জিএইচএফ পরিচালিত একটি ত্রাণকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি বলেন, এই সফরের উদ্দেশ্য হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গাজার মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সরাসরি ধারণা দেওয়া এবং খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর একটি কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি করা।

তবে এই সফর নিয়ে হামাস কড়া সমালোচনা করে জানায়, এটি একটি ‘প্রচারমূলক নাটক’, যার উদ্দেশ্য হলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের আন্তর্জাতিক সমালোচনা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া।

হামাস আরও অভিযোগ করে, এই বিতরণব্যবস্থার মাধ্যমে ইসরায়েল একদিকে যেমন গাজাবাসীদের বাস্তুচ্যুত করছে, অন্যদিকে ত্রাণ সংগ্রহের নামে ফাঁদ পেতে তাদের হত্যা করছে। মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৩০০ ফিলিস্তিনি ত্রাণের অপেক্ষায় থেকে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করে তারা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েল গাজায় আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে ক্ষুধা-সংক্রান্ত কারণে অন্তত ১৬৯ জন, যার মধ্যে ৯৩ জন শিশু, প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত বছর নভেম্বরেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াওভ গালান্টের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

পাশাপাশি গাজায় চালানো অভিযানের কারণে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে।

Link copied!